Quantcast
Channel: সুফিনিউজ২৪
Viewing all articles
Browse latest Browse all 72

আধ্যাত্মিক বা অতীন্দ্রিক দর্শন

$
0
0

ভূমিকা। ব্যক্তি-মানুষের জীবনে পাঁচ ইন্দ্রিয় শক্তির (দৃষ্টি, শ্রবণ, ঘ্রাণ, স্বাদ ও স্পর্শ) বাইরেও কিছু কিছু ঘটনা ঘটে থাকে। স্বাভাবিক বুদ্ধি বা কার্য-কারণ তত্ত্ব দিয়ে তার বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। কিন্তু মানব জীবনে এরকম বহু ঘটনা ঘটে। যেমন: একজন স্বপ্নে দেখেছেন, তিনি মরা মানুষ জীবিত করতে পারেন; কেউ কেউ রাতের অন্ধকারে গায়েবি আওয়াজ শুনতে পান; কারো কারো নজর লাগে বা মুখ লাগে যার ফলে অন্যের ক্ষতি হয়; কেউ কেউ ভবিষ্যতে কোথায় কি ঘটবে তার পূর্বাভাস পান, ইত্যাদি। এরূপ ঘটনা পাঁচ ইন্দ্রিয় ক্ষমতার বাইরে। তাই এসবের নাম অতীন্দ্রিক বা আধ্যাত্মিক ঘটনা।

বিভিন্ন ধর্মে  আধ্যাত্মিক  বা অতীন্দ্রিক ঘটনা ও ক্ষমতার বহু নজির পাওয়া যায়। যেমন: হজরত ইবরাহিম(আ.)এর নমরুদের বিশাল অগ্নিকুন্ড থেকে রক্ষা পাওয়া এবং আল্লাহ কর্তৃক তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু (পুত্র) কুরবানি করার নির্দেশ, হজরত মূসার (ক.) সঙ্গে আল্লাহর সাক্ষাৎ বা তাঁর দলবলসহ হেঁটে নীলনদ পার হওয়া,  হজরত ঈসা (আ.)-এর উম্মতের জন্য খাদ্যসজ্জিত টেবিল আকাশ থেকে নামিয়ে দেয়া, আল্লাহর ওহী জিবরাঈলের (আ.) মাধ্যমে হজরত মোহম্মদের (স.) এর কাছে নাজেল হওয়া এবং তাঁর মে’রাজ গমন, হজরত সুলাইমান (আ.)-এর নির্দেশে বিশেষ ফিতারের জ্ঞানী এক ব্যাক্তিত্ব রাষ্ট্রের রানী বিলকিসের সিংহাসনকে চোখের পলকে ইয়ামন থেকে উঠিয়ে আনা,  হজরত ইউনূসের (আ.) মাছের পেটে বেঁচে থাকা ইত্যাদি বহু দৃষ্টান্ত দেয়া যায়।

বিশ্বের বিভিন্ন সমাজে বহু উদাহরণ আছে যারা এসব আধ্যাত্মিক বা অতীন্দ্রিক চর্চা করে সফল হন। তারা সমাজে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হন।এই উপমহাদেশে সভ্যতার উষালগ্ন থেকে আধ্যাত্মিক বা অতীন্দ্রিক চর্চা হয়ে আসছে। সাধু-সন্ত-সন্যাসী, আউল-বাউল, পীর-ফকির, আউলিয়া-কুতুব-দরবেশ, মরমি-সুফি, ভিক্ষু-শ্রমণ, পুরুত-ঠাকুর, তান্ত্রিক-যোগী-পরমহংস প্রমুখ পদ-নাম এর সঙ্গে জড়িত। এঁরা অতীন্দ্রিক বা আধ্যাত্মিক কেরামতি প্রদর্শনের মাধ্যমে যুগে যুগে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন, যার যার ধর্ম বা আদর্শিক মতবাদ প্রচারের কাজ করেছেন এবং ভক্তি-শ্রদ্ধা কুড়িয়েছেন।

আবার জাদুকর, ডাকিনী, গুণিন, ওঝা, বৈদ্য, বাজিকর প্রমুখ ঝাড়ফুঁক, জাদু টোনা, বান মারা, বশ করা, ভুত ছাড়ানো প্রভৃতি তেলেসমাতি দেখিয়ে লোকজনকে বশীভূত বা সম্মোহিত করে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করেন। আর যারা ব্যর্থ হন তারা উন্মাদ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও লাঞ্চনা-গঞ্জনার শিকার হন। বলা বাহুল্য, ধর্ম সম্বন্ধে আমাদের অজ্ঞতা, কুসংস্কার এবং গোঁড়ামিই তাদের মত ধোঁকাবাজদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবার সুযোগ করে দেয়।

শাব্দিক অর্থ। আধ্যাত্মিক শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘আত্ম থেকে জাত’ বা ‘আত্মা সম্বন্ধীয়’ বা ‘মানসিক বা ব্রহ্মবিষয়ক’। অধ্যাত্ম অর্থ জীবাত্মা/পরমাত্মা। অধ্যাত্মবাদ একটি দার্শনিক মতবাদ যার মর্মকথাÑ ‘পরমাত্মাই সবকিছুর মূল’ । বাংলা ভাষায় অধ্যাত্ম ও আধ্যাত্মিকতা বা অতীন্দ্রিক ক্ষমতার বহু সমার্থক শব্দ পাওয়া যায়, যেমন অধ্যাত্মবাদ/তত্ত্ব, আত্মদর্শন, আত্মজ্ঞান/বিদ্যা, সুফিবাদ, ব্রহ্মবাদ/বিদ্যা, দেহতত্ত্ব, অন্তদৃষ্টি/জ্ঞানদৃষ্টি, মারেফাত, মনোজ্ঞান, যোগজ্ঞান, চীবর, মরমিবাদ, অতীন্দ্রিয়বাদ, পরমাত্মা, চৈতন্যবাদ, মুরাকেবা, আলোকদৃষ্টি, অলৌকিকতত্ত্ব ইত্যাদি।

২। আধ্যাত্মিক বা অতীন্দ্রিক দর্শন (Mysticism)|

আধ্যাত্মিক বা অতীন্দ্রিক দর্শন-এর সমার্থক শব্দ অধ্যাত্মবাদ, আত্মিকবাদ, অতীন্দ্রিয়বাদ, মরমিবাদ, সুফিবাদ ইত্যাদি (Mysticism)। এই নিবন্ধে Mysticism (মিস্টিসিজম) এর বাংলা পরিভাষা হিসেবেই এই শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। ‘মিস্টিসিজম’ এমন এক গূঢ় তত্ত্ব, যা স্রষ্টা সম্পকে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্থাৎ সর্বত্রই বিরাজমান তাঁর অস্তিত্ব সম্পর্কে সম্যক উপলব্ধি দেয়। বিশ্বের প্রধান প্রধান ধর্ম ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিষ্টান, ইহুদী প্রতিটিতে ‘মিস্টিসিজম’ চর্চা চলে আসছে। তার সাথে সংশ্লিষ্ট সব আদর্শ, নৈতিকতা, আচার-প্রথা, পুরাণ, উপকথা, জাদুটোনা ইত্যাদিও রয়েছে। এর প্রভাব বিশ্বের প্রচলিত সব ভাষার সাহিত্য, বিশেষ করে কবিতা ও গানে অতি উজ্জ্বল ও সুস্পষ্টভাবে বিদ্যমান।

যিনি মিস্টিসিজম চর্চা করেন তাকে বলা হয় মিস্টিক। এর ব্যবহারিক বাংলা অর্থ মরমি সাধক বা মরমিয়া, সুফি, মুর্শিদ, দরবেশ, সাধু, সন্ন্যাসী, তান্ত্রিক, গুরু ইত্যাদি। ইংরেজি Mysticism এসেছে গ্রিক শব্দ mystes থেকে যার অর্থ চোখ বন্ধ করা। মরমি সাধকেরা চোখ বন্ধ করে অন্তর্দৃষ্টি ও গভীর চিন্তা-তন্ময়তার মাধ্যমে সত্য ও সুন্দরকে উপলব্ধি করার প্রয়াস পান। এই প্রয়াসে মনীষা ও ভাবাবেগের এক প্রকার সংমিশ্রণ ঘটে। এই মিশ্রণের বিচিত্র অনুভূতির প্রকাশ রূপক ও উপমা ছাড়া সম্ভব নয়। সুফিবাদেরও মর্মকথা: ‘হৃদয়ে তোমার চলে যেন আলিফের (আল্লাহ) খেলা। পবিত্র দৃষ্টি দিয়ে যদি তুমি জীবনকে দেখতে শেখো, তুমি জানবে আল্লাহর নামই যথেষ্ট। আল্লাহ প্রেমময় ও সৌন্দর্যময়। তিনি অনন্ত, অবিনশ্বর ও সর্বত্র বিরাজমান। প্রেম ও ভক্তির পথে আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমেই তাঁকে পাওয়া যায়। আল্লাহতে অনুগত বা লীন হওয়া সুফি সাধকের চরম লক্ষ্য।’

আধ্যাত্মিক সাধনা বা অধ্যাত্মবাদ অর্থ ব্রহ্ম বা পরমাত্মাই সবকিছুর মূল, এই দার্শনিক মত; আমাদের যাবতীয় জ্ঞানই জ্ঞাতার আত্মগত, এই মত। সংজ্ঞা হিসেবে বলা যায়, অধ্যাত্মবাদ এমন এক দর্শন, যেখানে আত্মার অবস্থা সম্পর্কিত আলোচনাই মুখ্য বিষয়। আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যমে স্রষ্ঠা/আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনই হলো এই দর্শনের মূলকথা। পরমসত্তা বা আল্লাহকে জানার ও চেনার আকাঙ্খা মানুষের চিরন্তন। স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে আধ্যাত্মিক ধ্যান ও কোরআন-হাদিসের জ্ঞানের মাধ্যমে জানার প্রচেষ্টা হলো অধ্যাত্মবাদ বা আধ্যাত্মিকতা বা অতীন্দ্রিক দর্শন।

ধর্ম, অধ্যাত্মবাদ ও আধ্যাত্মিকতাকে যদি একটা পিরামিড ভাবা হয় তবে ধর্ম হল নিম্নতম স্থান, অধ্যাত্মবাদের স্থান এর উপরে এবং পিরামিডের চূড়ায় থাকছে আধ্যাত্মিকতা।

প্রথম ধাপে আছে ধর্ম- যেমন ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ধর্ম প্রমুখ। অর্থাৎ, যেটা মানুষের তৈরী ঈশ্বরের কাছে যাবার জন্যে আপন দেশ কাল গন্ডীর সীমায় আবদ্ধ থাকে। তাই বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ধর্মে একেক রকম ভাবনা- কেউ ভগবান, কেউ ঈশ্বর, কেউ ডাকেন আল্লাহ। সব মানুষদের তৈরী। ঈশ্বরের কাছে যাওয়ার জন্যে পথের শুরু বলা যায়।

ধর্মের গভীরে যদি যাওয়া যায় তবে দেখা যাবে তার যে আসল ভাব সেটি হল অধ্যাত্মবাদ। অর্থাৎ, ঈশ্বরকে ভালোবেসে তার কাছে পৌঁছানোর জন্যে যে বিভিন্ন জ্ঞান, যোগ বা ভক্তির পথ তা এখান থেকে শুরু। এখানে অধ্যাত্মবাদে কোনো ধর্মের সংকীর্ণতার মধ্যে মানুষ আবদ্ধ হয়না। যারা ধর্মের দেশ কাল পাত্রের গন্ডীর উপরে উঠতে পেরেছেন তারাই এই অধ্যাত্মবাদ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেন আর কিভাবে সেই অধ্যাত্মবাদকে আয়ত্ত করা যায় সেজন্যে চেষ্টা শুরু করেন।

আর অধ্যাত্মবাদ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে করতে যারা নির্দিষ্ট উপায়ে সে পথে এগোতে শুরু করেন তাদের মধ্যেই জাগে আধ্যাত্মিক চেতনা। তারাই হলেন যথার্থ আধ্যাত্মিক পথের পথিক। সব মিলিয়ে বলতে গেলে, আধ্যাত্মিক হওয়াই আসল। কারণ সকল ধর্মের মূল নির্যাস হলো আধ্যাত্মিক চেতনা। তাইতো আধ্যাত্মিক পথের গভীরে গিয়ে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন ‘যত মত তত পথ’। আধ্যাত্মিক চেতনা জাগ্রত হলে এই উপলব্ধিই আসে।

আবার চারু শিল্পী শহিদ কবির বলেন,‘অধ্যাত্মবাদ হচ্ছে রূঢ় বাস্তবতা থেকে পালিয়ে বেড়ানো। মনে হলো, অধ্যাত্মবাদের ওপর আমার বিশ্বাস বাস্তবতা থেকে আমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। স্পর্শ না করা পর্যন্ত কোনো কিছুতেই বিশ্বাস নয় এমন ধারণা আস্তে আস্তে পেয়ে বসে।’

আধ্যাত্মিক মনোবিদ্যা ( Parapsychology)

কিভাবে শুরু হলো ?

আধ্যাত্মিক কর্মকান্ড নিয়ে আমাদের দেশে কোন যৌক্তিক বা বৈজ্ঞানিক গবেষণার চেষ্টা হয়েছে বলে জানা নেই।

উনিশ শতকের শেষ দিক থেকে পশ্চিমে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা শুরু হয়বিশেষ করে জার্মানিতে। জার্মানিতে প্রথম মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণাগার (Laboratory of Experimental Psychology) স্থাপনের পর মনোবিজ্ঞান যেমন বিজ্ঞানের মর্যাদা দ্রুত অর্জন করেতেমনি তার পাশাপাশি আধ্যাত্মিক মনোবিদ্যাও।

অতীন্দ্রিক বা আধ্যাত্মিক কর্মকান্ড ও অভিজ্ঞতা নিয়ে বিজ্ঞানের যে শাখা কাজ করে তারই নাম আধ্যাত্মিক বা অতীন্দ্রিয় বা ইন্দ্রিয়াতীত বা আধ্যাত্মিক মনোবিদ্যা (parapsychology)

Parapsychology শব্দটি দার্শনিক ম্যাক্স Dessoir ১৮৮৯ সালে বা তার কাছাকাছি সময়ে প্রথম ব্যবহার করেন। আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী ও দার্শনিক উইলিয়াম জেমস (১৮৪২১৯১০প্রথম আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তখন বলা হতো মনস্তাত্ত্বিক বা আধ্যাত্মিক গবেষণা (psychical research)

১৯৩০ এর দশকে এটিকে গুরুত্বপূর্ণ একাডেমিক বিষয় হিসেবে পরীক্ষামূলক পদ্ধতির (experimental methodology)দিকে সরানো হয় এবং আধ্যাত্মিক গবেষণার বদলে আধ্যাত্মিক মনোবিদ্যা শব্দটি ব্যবহার করা হয়। ১৯৩০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনার ডিউক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জে.বিরাইন ও তাঁর স্ত্রী লুসিয়া রাইন মনস্তাত্বিক গবেষণাকে পরীক্ষামূলক গবেষণায় উন্নীত করার চেষ্টা করেন।

জে.বিরাইন বিভিন্ন আধ্যাত্মিক ক্ষমতাকে ব্যাখ্যা করার জন্য অতীন্দ্রিয় উপলব্ধিকে (extrasensory perception-esp)ব্যবহার করেন। অতীন্দ্রিয় উপলব্ধিকে অনেক সময় ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নামেও অভিহিত করা হয়। অতীন্দ্র্রিয় উপলব্ধি বলতে বোঝায় মনের বিশেষ ক্ষমতার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা। এক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে শারীরিক কোন উপায়ে বা পাঁচ ইন্দ্রিয় শক্তি দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয় না। এই পরিভাষাটি (esp) সাধারণ উপায় ব্যতিরেকে বিশেষ উপায়ে তথ্য লাভকে নির্দেশ করে। যেমন– মনের দ্বারা অতীতকালের তথ্য লাভ।

১৯৪০ সালে জে.বি.রাইন ও জেজিপ্র্যাট ১৮৮২ থেকে হালনাগাদ অবধি কার্ডভিত্তিক অনুমান সংশ্লিষ্ট পরীক্ষাগুলো পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা করে একটি রচনা লেখেন। রচনাটির নাম Extra-Sensory Perception After Sixty Years (আধ্যাত্মিক/অতীন্দ্রিক উপলব্ধির ষাট বছর)। এটি বিজ্ঞান সম্মত প্রথম মেটাঅ্যানালাইসিস হিসেবে স্বীকৃত। এতে ৫০টি পরীক্ষার কথা উল্লেখ আছেতন্মধ্যে ৩৩টিতে রাইন ছাড়াও অন্যান্য গবেষক ও ডিউক ইউনিভার্সিটির অবদান রয়েছে। এই মেটাঅ্যানালাইসিস অনুসারে স্বাধীন পরীক্ষাগুলোর ৬১%ফলাফল আধ্যাত্মিক/অতীন্দ্রিক উপলব্ধির(ইএসপিসপক্ষে।

মানে কি?

গ্রিকভাষা থেকে আধ্যাত্মিক বা অতীন্দ্রিক মনোবিদ্যা Parapsychology টার্ম এর উৎপত্তি। এর বাংলা অর্থ- যে মনোবিদ্যা প্রচলিত/গোঁড়া বিজ্ঞান কর্তৃক বাদ দেয়া মানসিক ঘটনাবলী (psi phenomena) নিয়ে কাজ করে।জীববিজ্ঞানী Berthold P. Wiesner আবিস্কার করেছেন গ্রিক শব্দ psi (সাই)।গ্রিক বর্ণমালার ২৩তম অক্ষর psi (সাই)।এর অর্থ মন বা আত্মা। সাই বা মন বা আত্মা একটি অতীন্দ্রিক/আধ্যাত্মিক(extrasensory) উপলব্ধি/শক্তি।এই শক্তি দিয়ে কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।এই অতীন্দ্রিক বা আধ্যাত্মিক ঘটনাবলীর(psi phenomena) অভিজ্ঞতার ব্যাখ্যা প্রাকৃতিক বা জীব বিজ্ঞানে অস্বীকৃত। এ বিষয় নিয়েই কাজ করে Parapsychology (আধ্যাত্মিক মনোবিদ্যা)। মনোবিজ্ঞানী রবার্ট দাউলেস ব্রিটিশ জার্নাল অব সাইকলজিতে লেখা একটি প্রবন্ধে ১৯৪২ সনে এ বিষয়টি প্রথম প্রকাশ করেন। মনোবিজ্ঞান (Psychology) কাজ করে পাঁচ ইন্দ্রিয়-গ্রাহ্য আচরণ নিয়ে আর আধ্যাত্মিক মনোবিদ্যা (Parapsychology) কাজ করে পাঁচ ইন্দ্রিয়-বহির্ভূত আচরণ নিয়ে।

প্রকারভেদ

প্যারাসাইকোলজিক্যাল এসোসিয়েশন সাইকে (psi) দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করে- অতীন্দ্রিক উপলব্ধি (সাই-গামা)এবং মনো-সঞ্চালন শক্তি (সাই-কাপ্পা)।

অতীন্দ্রিক উপলব্ধি (extrasensory perception) হচ্ছে অন্যের অনুভূতি বোঝার ক্ষমতা। শিশুদের মধ্যে এটা প্রবলভাবে পরিলক্ষিত হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই ক্ষমতাটি কমে যেতে থাকে। তবে কিছু মানুষের মাঝে বয়স বাড়লেও ক্ষমতাটি রয়ে যায়। আর এ কারণেই হয়তো এ জাতীয় মানুষদের মাঝে অন্যকে সাহায্য করার প্রবল প্রবণতা দেখা যায়।

মনো-সঞ্চালন শক্তি/ক্ষমতা (Psychokinesis/Telekinesis or Mind Over Matter) হচ্ছে কোন বস্তুকে মনের শক্তি দ্বারা নাড়ানো অথবা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা। বিখ্যাত ম্যাজিসিয়ান ইউরি গেলার (Uri Geller)এই শক্তির সাহায্যে চামচ বাঁকিয়ে ফেলতে পারেন যা ‘Geller-effect’ নামে খ্যাত। এই ক্ষমতা প্রায় সবাই পেতে চায়। এখানে ট্রিক হচ্ছে আপনি যেটা দেখছেন সেটাকে গভীর বিশ্বাসের সাথে ভিন্নভাবে দেখা। সিনেমায় এমনটি আমরা হরহামেশা দেখি।

পরীক্ষা-নীরিক্ষা পদ্ধতি।

আধুনিক প্যারাসাইকোলজি নিয়ে গবেষণা মূলত বিভিন্ন দেশে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত ও বেসরকারি অনুদানের মাধ্যমে নির্বাহিত হয়। প্যারাসাইকোলজি গবেষণার বিষয় মূলধারার একাডেমিক জার্নালে/পত্রিকায় খুব কমই প্রকাশিত হয়। অল্প কয়েকটি আছেযেমন- Journal of Parapsychology, Journal of Near-Death Studies, Journal of Consciousness Studies, Journal of the Society for Psychical Research and Journal of Scientific Exploration|

আধ্যাত্মিক মনোবিদরা আধ্যাত্মিক ঘটনাবলীকে দৃশ্যমানভাবে পরীক্ষা করার জন্য বহু পদ্ধতি অবলম্বন করেন। এই পদ্ধতিগুলোর মধ্যে যেমন রয়েছে গুণগত বৈশিষ্ট্য পরিমাপক সনাতন মনোবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি তেমনি পরিমাণগত পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নীরিক্ষা নির্ভর বিভিন্ন পদ্ধতি। এর মধ্যে Ganzfeld, Remote viewing, psychokinesis or random number generators, Direct mental interactions with living systems উল্লেখযোগ্য।

কি পাওয়া গেল?

এসব গবেষণা থেকে এটুকু সত্যতা জানা গেছে যে দূরে নিঃসঙ্গ থাকা কোন ব্যক্তির ওপর অন্য ব্যক্তি নিরবচ্ছিন্নভাবে বিশেষ মনোযোগ আরোপ করলেতা নিঃসঙ্গ ব্যক্তির স্নায়ুকে প্রভাবিত (চঞ্চল বা শান্ত) করে। তবেআধ্যাত্মিক মনোবিদ্যা নিয়ে গবেষণা শত বছরের বেশী সময় ধরে অব্যাহত থাকলেও আধ্যাত্মিক ক্ষমতার অকাট্য প্রমাণ আজও দেখানো যায়নি বলে সমালোচিত।


Viewing all articles
Browse latest Browse all 72

Trending Articles