Quantcast
Channel: সুফিনিউজ২৪
Viewing all articles
Browse latest Browse all 72

আধ্যাত্মিক সাধনা

$
0
0

আমরা হানাফি মাযহাবের অনুসারী। আমাদের ইমামের নাম আবু হানিফা। তার আসল নাম নোমান বিন সাবেত।  তিনি তাবেঈ ছিলেন। তিনি বাগদাদে একশত পঞ্চাশ হিজ্জরিতে ইন্তেকাল করেন। এটা তার অতিসংক্ষিপ্ত পরিচয়; তবে আমরা এখানে তার অধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে জানব।
বড় বড় ব্যক্তিদের দৃষ্টিকোণ থেকে মনে করা হত যে, অন্য ব্যক্তিরা যেভাবে তাসাউফের চিন্তা ভাবনা থেকে অনেক দূরে তেমনি ইমাম আবু হানিফা রহ. ও অনেক দূরে ছিলেন। কিন্তু তাদের ধারণা সঠিক না; বরং আহলে তাসাউফ ও আহলে সুলুকগণ তাসাউফ সম্পর্কে যে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন তার বহু আগ থেকে যদি গভীর দৃষ্টিপাত করা হয় এবং আবু হানিফা রহ. এর জীবনযাপন ও কর্মের দিকে নজর দেয়া হয় তাহলে তার দিনরজনীতে তাসাউফের সফল রুপরেখা ফুটে উঠে। তার ব্যক্তিগত জীবনেও অনুগ্রহ, উত্তম রীতিনীতি ছিল পরিপূর্ণ হারে। এমনকি তাসাউফ বা এসলাহী তাসাউফ শব্দগুলো পারিভাষিক ব্যবহারে আসার পূর্বেই ইমাম আবু হানিফা রহ. ইলমী জীবনপ্রবাহে তার পরিচয় মিলে। যেমন র্দুরে মুখতার কিতাবের লেখক, আল্লামা মুহাম্মদ বিন আলী বিন মুহাম্মদ বিন আবদুর রহমান বিন হাছকুফি রহ. [মৃত্যু ১০ ই শাওয়াল ১০৮৮ হিজ্জরি] বলেন, আমি ইলমে তাসাউফ অর্জন করেছি- হযরত শিবলী রহ. থেকে, তিনি হযরত ছিররী সকতী থেকে, তিনি হযরত মারুফ কারখী রহ. থেকে, তিনি হযরত দাউদ তায়ী থেকে, তিনি ইলমে তাসাউফ ইলমে হাদীস এবং ইলমে ফিকাহ অর্জন করেছেন ইমাম আবু হানিফা নুমান বিন সাবেত রহ. থেকে। এটা শুধু ইমাম আবু হানিফা রহ. এর মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিলনা বরং বর্ণনা করা হয়েছে যে, শতশত শতাব্দীর মাঝে এমন চার জন শেষ্ঠ মানব ছিলেন যারা তাসাউফের মধ্যে থাকার কারণে তাদের জীবন মর্যাদা এবং অবস্থান উজ্জল নক্ষত্রের ন্যায় আলোকিত হয়েছে। ইমাম মহিউদ্দিন শরীফ নদভি তার কিতাব “আল মাকসাদ” এর আধ্যাত্মিক সাধনার পাঁচটি উসুল বা মূলনীতি বর্ণনা করেন। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো।
এক. নির্জনতায় বা অনির্জনতায় সর্বাবস্থায় আল্লাহ তাআলার তাকওয়া অবলম্বন করা।
দুই. কোন কাজ বা উপদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে হুজুর পাক সা. এর কাজ বা উপদেশ অনুসরণ করা।
তিন. সম্মানিত, লাঞ্চিত ও কৃতজ্ঞসহ সর্বাবস্থায় সৃষ্টিজীবের উপর ভরসা বিলকুল না করা।
চার. অধিক বা স্বল্প রিযিকে আল্লাহর উপর কৃতজ্ঞ থাকা।
সুঃখে দুঃখে আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ থাকা।
তদ্রুপ জুনাঈদ বাগদাদী রহ. ও অধ্যাত্মিক তরিকার উপর পাচঁটি মূলনীতি বর্ণনা করেছেন।
এক. দিনের বেলায় রোযা রাখা।
দুই. রাতের বেলায় নামাযে মশগুল থাকা।
তিন. কোন আমল লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে না করে ইখলাসের সাথে আমল করা।
চার. কোন কাজ তথা আমল করার সময় মনোযোগ দিয়ে করা।
পাচঁ. যে কোন অবস্থায় বা পরিস্থিতিতে আল্লাহর উপর ভরসা করা।
আবু হানিফা রহ. এর সমস্ত জীবন যে তাসাউফের বিশষত্বের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল এ ব্যাপারে সকল ঐতিহাসিক ও আলোচনা বিশ্লেষকগণ এক মত। তবে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর নামের সাথে সুফি শব্দ বা তার ধারাবাহিকতার ব্যবহার ছিলনা। তবে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর তাসাউফ ও সুফিদের সাথে সম্পৃক্ততা উল্লেখ করে, সুফিশাস্রের প্রশিদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য কিতাব  ‘আলফুতুহাত ওয়াল আযওয়াক’ এর গ্রন্থকার লিখেন, হযরত আবু হানিফা রহ. সুফিদের খুব ভালবাসতেন। তিনি শুধু ভালই বাসতেন না বরং তাদের আধ্যাত্মিকতার স্তর ও জীবনযাত্রাকে অনেক সম্মান করতেন।
প্রাচ্যবিদগণ দ্রুত ইসলমী ইলম ও শিক্ষাকে আবশ্যকীয়ভাবে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া ও সুন্দর একটি রুপে রুপান্তরিত করার জন্য তার প্রতি বিশেষ মনোনিবেশ করেন। এমনিভাবে তাসাউফকে সুন্দর করার জন্য খুবই চেষ্টা করেন। তাই আসহাবে কুলুব এবং সাহিত্যিকগণ তাদের লিখনী বা যে কোনো কাজে প্রাচ্যবিদগণের ইলমের বেশি অনুসরণ করেন। আর এই একনিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অক্লান্ত পরিশ্রমের প্রচেষ্টায় আজ পর্যন্ত এই ইসলামী শাস্ত্র ও ইলমের প্রকৃত ছবি বিদ্যমান দেখতে পাই।
যাহোক এখানে আমরা লক্ষ করব প্রকৃত তাসাউফ কোনটি? নিচে তাসাউফের সঙ্গা ও তার প্রকারভেদ উল্লেখ করা  হলো। তাসাউফকে দুভাগে ভাগ করা যায়।
এক. ইসবাত তথা ইতিবাচক: আর ইতিবাচক তাসাউফ বলা হয় ঐ তাসাউফকে যা বেদআত ও প্রচলিত কুপ্রথা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত এবং তার মধ্যে কুরআন ও হাদীস দ্বারা পরিপূর্ণ জীবনযাত্রা ও সুগম পথ পরিচালনা শিক্ষা দেয়া হয়।
দুই. নফি বা নিতিবাচক:  আর নিতিবাচক তাসাউফ বলা হয় ঐ তাসাউফকে যার মধ্যে পরিপূর্ণভাবে বিদাআত, প্রচলিত কুপ্রথা ও অশ্লীল কথাবার্তা পরিপূর্ণভাবে পাওয়া যায়। আর ২য় তাসাউফের উৎপত্তি প্রাচ্যদেশ থেকেই উদঘাটন হয়। এসব দেশের সরলমনা মানুষরা ২য় বিষয়গুলো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাসাউফের জ্ঞান ও শিক্ষাকে পুরাপুরিভাবে অস্বীকার করে। এরা শুধু এতেই ক্ষ্যান্ত হয়নি বরং এর বিরুদ্ধে প্রস্তুতমূলকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বি হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবন অধ্যাত্মিকতার ইলম ও আমল দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল। সকল আহলে সালেকগণ ঐক্যমত হন যে, তাসাউফের সূচনা আমীরুর মুমিনিন হযরত আলী বিন আবি তালিব রা. থেকে হয়। এমনকি তিনি সূফিগণের সরদারও ছিলেন। হযরত আবু হানিফা রহ. এর দাদার আসল নাম ছিল জাওযাহ। তিনি ইসলাম গ্রহণ করার পর নাম রাখা হয় নোমান। আর জাওযাহ তথা নোমানের সাথে হযরত আলী রা. এর খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। এই নোমানের ঘরে একটা ছেলে সন্তান হয়, নাম রাখা হয় সাবেত। নোমান তার নবজাতক সাবেত কে নিয়ে হযরত আলী রা. কাছে যান, ছেলের জন্য দোআ নিতে। আলী রা. তার মাথায় হাত বুলিয়ে দোআ করে দেন। তারপর সাবেত বিন নোমানের কোল জুরে আসে এক ছেলে সন্তান। সাবেত তার ছেলের নাম রাখেন বাবার নামে, তথা নোমান। যার অপর নাম হলো আবু হানিফা। নসবনামা হলো নোমান বিন সাবেত বিন নোমান। এদ্বারাই বুঝা যায় ইমাম আবু হানিফা রহ. এর সম্পর্ক আমীরুল মুমিনিন হযরত আলী রা. এর সাথে কেমন ছিল। এছাড়াও অন্য আরেকটা সম্পর্ক আছে, তা হলো তার উস্তাদদের উস্তাদগণের নামের তালিকায় হযরত আলী রা. এর নাম উঠে আসে। এই গুণের কারনেই হযরত দাউদ তায়ী রহ. এর উস্তাদগণের নামের মাঝে হযরত আবু হানিফা রহ. এর নাম একজন হক্কানী উস্তাদ হিসাবে পাওয়া যায়। এ থেকেই বুঝা যায় ঈমাম আবু হানিফা রহ. আধ্যাত্মিকতায় কতো উপরে ছিলেন। আল্লাহ আমাদের বুঝার তাওফিক দান করুন এবং আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে পুতপবিত্র জীবন যাপন করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
লেখক: শিক্ষার্থী মালিবাগ মাদরাসা,
ইমামে আযম এবং আধ্যাত্মিক সাধনা : আবদুল্লাহ জামিউ আযম জীম
আমরা হানাফি মাযহাবের অনুসারী। আমাদের ইমামের নাম আবু হানিফা। তার আসল নাম নোমান বিন সাবেত।  তিনি তাবেঈ ছিলেন। তিনি বাগদাদে একশত পঞ্চাশ হিজ্জরিতে ইন্তেকাল করেন। এটা তার অতিসংক্ষিপ্ত পরিচয়; তবে আমরা এখানে তার অধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে জানব।
বড় বড় ব্যক্তিদের দৃষ্টিকোণ থেকে মনে করা হত যে, অন্য ব্যক্তিরা যেভাবে তাসাউফের চিন্তা ভাবনা থেকে অনেক দূরে তেমনি ইমাম আবু হানিফা রহ. ও অনেক দূরে ছিলেন। কিন্তু তাদের ধারণা সঠিক না; বরং আহলে তাসাউফ ও আহলে সুলুকগণ তাসাউফ সম্পর্কে যে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন তার বহু আগ থেকে যদি গভীর দৃষ্টিপাত করা হয় এবং আবু হানিফা রহ. এর জীবনযাপন ও কর্মের দিকে নজর দেয়া হয় তাহলে তার দিনরজনীতে তাসাউফের সফল রুপরেখা ফুটে উঠে। তার ব্যক্তিগত জীবনেও অনুগ্রহ, উত্তম রীতিনীতি ছিল পরিপূর্ণ হারে। এমনকি তাসাউফ বা এসলাহী তাসাউফ শব্দগুলো পারিভাষিক ব্যবহারে আসার পূর্বেই ইমাম আবু হানিফা রহ. ইলমী জীবনপ্রবাহে তার পরিচয় মিলে। যেমন র্দুরে মুখতার কিতাবের লেখক, আল্লামা মুহাম্মদ বিন আলী বিন মুহাম্মদ বিন আবদুর রহমান বিন হাছকুফি রহ. [মৃত্যু ১০ ই শাওয়াল ১০৮৮ হিজ্জরি] বলেন, আমি ইলমে তাসাউফ অর্জন করেছি- হযরত শিবলী রহ. থেকে, তিনি হযরত ছিররী সকতী থেকে, তিনি হযরত মারুফ কারখী রহ. থেকে, তিনি হযরত দাউদ তায়ী থেকে, তিনি ইলমে তাসাউফ ইলমে হাদীস এবং ইলমে ফিকাহ অর্জন করেছেন ইমাম আবু হানিফা নুমান বিন সাবেত রহ. থেকে। এটা শুধু ইমাম আবু হানিফা রহ. এর মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিলনা বরং বর্ণনা করা হয়েছে যে, শতশত শতাব্দীর মাঝে এমন চার জন শেষ্ঠ মানব ছিলেন যারা তাসাউফের মধ্যে থাকার কারণে তাদের জীবন মর্যাদা এবং অবস্থান উজ্জল নক্ষত্রের ন্যায় আলোকিত হয়েছে। ইমাম মহিউদ্দিন শরীফ নদভি তার কিতাব “আল মাকসাদ” এর আধ্যাত্মিক সাধনার পাঁচটি উসুল বা মূলনীতি বর্ণনা করেন। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো।
এক. নির্জনতায় বা অনির্জনতায় সর্বাবস্থায় আল্লাহ তাআলার তাকওয়া অবলম্বন করা।
দুই. কোন কাজ বা উপদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে হুজুর পাক সা. এর কাজ বা উপদেশ অনুসরণ করা।
তিন. সম্মানিত, লাঞ্চিত ও কৃতজ্ঞসহ সর্বাবস্থায় সৃষ্টিজীবের উপর ভরসা বিলকুল না করা।
চার. অধিক বা স্বল্প রিযিকে আল্লাহর উপর কৃতজ্ঞ থাকা।
সুঃখে দুঃখে আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ থাকা।
তদ্রুপ জুনাঈদ বাগদাদী রহ. ও অধ্যাত্মিক তরিকার উপর পাচঁটি মূলনীতি বর্ণনা করেছেন।
এক. দিনের বেলায় রোযা রাখা।
দুই. রাতের বেলায় নামাযে মশগুল থাকা।
তিন. কোন আমল লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে না করে ইখলাসের সাথে আমল করা।
চার. কোন কাজ তথা আমল করার সময় মনোযোগ দিয়ে করা।
পাচঁ. যে কোন অবস্থায় বা পরিস্থিতিতে আল্লাহর উপর ভরসা করা।
আবু হানিফা রহ. এর সমস্ত জীবন যে তাসাউফের বিশষত্বের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল এ ব্যাপারে সকল ঐতিহাসিক ও আলোচনা বিশ্লেষকগণ এক মত। তবে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর নামের সাথে সুফি শব্দ বা তার ধারাবাহিকতার ব্যবহার ছিলনা। তবে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর তাসাউফ ও সুফিদের সাথে সম্পৃক্ততা উল্লেখ করে, সুফিশাস্রের প্রশিদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য কিতাব  ‘আলফুতুহাত ওয়াল আযওয়াক’ এর গ্রন্থকার লিখেন, হযরত আবু হানিফা রহ. সুফিদের খুব ভালবাসতেন। তিনি শুধু ভালই বাসতেন না বরং তাদের আধ্যাত্মিকতার স্তর ও জীবনযাত্রাকে অনেক সম্মান করতেন।


Viewing all articles
Browse latest Browse all 72

Trending Articles